কবিতার পাতা ৫০
একটি লিটল ম্যাগাজিনের কাছে তার ৫০ তম সংখ্যা
আন্তরিক ভালোবাসার ও আনন্দের। বিগত প্রায় এক বছর
সময়কাল জুড়ে সপ্তাহের প্রতি রবিবারে 'বারাকপুর স্টেশন
পত্রিকা' প্রকাশিত হচ্ছে। পাঠকের কাছ থেকে যে ভালোবাসা,
আগ্রহ এবং উৎসাহ পেয়েছি তা অভাবনীয়। সামান্য একটি
ফেসবুক পেজের জন্য বেশ কিছু মানুষ প্রতি সপ্তাহে অপেক্ষা
করে থাকেন একথা ভাবলেও ভালো লাগে। আপনাদের
ভালোবাসা এভাবেই পত্রিকার সাথে জড়িয়ে থাকুক। বাংলা
ভাষা, বাংলা কবিতা এবং সুস্থ সাহিত্য ও সংস্কৃতির জয় হোক।
সম্পাদকমন্ডলী
গোলাম রসুলের কবিতা
সে
****
সন্ধ্যায় সে এসেছিল সমুদ্র আর জাহাজ নিয়ে
হাওয়ায় গজিয়ে উঠলো উপকূল
শহরের লাল শিখার নিচে চাঁদের সংরক্ষিত মাঠ
বন্ধুত্বের স্মৃতির মতো অমরত্বের ধার দিয়ে আমরা
ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম নক্ষত্রদের সাথে
গোলাপের প্রহর
আর রাত্রি
সুবর্ণরেখা এঁকে হেঁটে যাচ্ছে যে মেয়ে
তার পায়ে সপ্তদশ শতাব্দীর ডাঙা
তাকে পৃথিবীর মতো দেখতে
====================================
দ্বিজেন আচার্যের কবিতা
মৃত্যুদন্ড
********
এ দন্ড ফিরিয়ে নাও
কবিকে হত্যা করলে এ পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে
ভেবে দেখ একদিন পৃথিবীর প্রথম আলোয়
কবিই বলেছিল প্রথম সংলাপ
মৃতজনে দিয়েছিল প্রাণ
কবি মারা গেলে বাতাস বইবে না
ফুটবে না ফুল
মুছে যাবে অন্ধকারে, সভ্যতার ব্যাপক বিস্তার
কবিকে মারবে বলে মুখোমুখি তুলেছ কৃপাণ
কবিও মারতে পারে - তারও আছে শব্দভেদী বান
তবু সে শান্ত ও নির্ভয়
অকারণ রক্তপাত পছন্দ করে না
====================================
উৎপল ত্রিবেদীর কবিতা
আকাশ প্রদীপ
***************
একবার বাইরে এসো, এখন অনেকটা রাত
একবার আকাশ দেখ, একবার ঘাস;
হেমন্ত ফুরিয়ে এল।
দু:খী একটা আকাশ প্রদীপ একা একা জ্বলছে,
ওকে ঘিরে রাত জাগছে হিমকণা
চন্দ্রসভায় তখন তুমুল বিতর্ক হচ্ছে
আকাশে প্রদীপ জাগে
নাকি প্রদীপের দেহ ঘিরে জাগছে আকাশ?
এ'সময়ে একবার তুমি এসো
ঘুম থেকে একবার ফেরো
এই জেগে থাকা মানুষের গ্রামে
যেইখানে রাতপাখিদের নানা নামে
একবার একবার করে দুলে ওঠে
আমাদের পুরনো প্রদীপ
আর সমস্ত আকাশ
একবার একবার করে ধ্যানে বসে
প্রবাহিত রাত্তিরের একক মায়ায়।
====================================
অরুণাংশু ভট্টাচার্যের কবিতা
নিরাকার
**********
অসুখ তো আত্মজন, এতে যদি বিরত আশ্বিন
নয়নের ছায়া থেকে ক্রমে ভুল, আসলে বেদনা--
মনিবন্ধে মিশে থাকে তবে এই প্রশ্নটির সনে
বালকবেলার টুপি খেলা করে স্বপ্নালোকে, ক্ষীণ
এইভাবে বিরচিত, পাশে জল, এত গলিঘুঁজি
এমন অলঙ্ঘ্য রাত্রি যদি ভাসে নিরাকার হয়ে
কীভাবে নীলাভ চাঁদ, পরিতাপ, ক্রমশ দক্ষিণ
অভিমানে বায়ুস্তর গমগম করে ওঠে বুঝি
কেড়ে নিচ্ছে অভিলাষ, নিয়তিতাড়িত সারিগান
আতঙ্কসমূহ আর ঘোরের আখ্যান যদি ভূমি
তবে তা সার্থক হচ্ছে, মনে হচ্ছে কুকুরকুন্ডলী ;
অন্যথায় বজ্র আর বিদ্যুতের পাশে চন্দ্রযান
এ মোহের অর্থ নেই, ব্যর্থতাও ছিল কিছু, হাওয়া--
অথচ পতঙ্গ সব, আলো আছে, অন্ধকারে যাওয়া
====================================
দেবজ্যোতি রায়ের কবিতা
স্তম্ভিত পকেটমার
*****************
সোডার বোতলে তুমি গানের বুদবুদ
দ্রাক্ষাতনু আশ্চর্যলতায়
জ্যোৎস্নাহরিণের শিং বেঁকে গেছে গোধূলির দিকে
ছায়াশরীরের কথকতা থেকে
ফিরে আসি
সাপুড়ের ডুগডুগির কাছে।
আমি স্তম্ভিত পকেটমার
পূর্বজন্ম থেকে দাঁড়িয়ে রয়েছি আলোহীন
বাতিস্তম্ভের নীচে
এখানেও প্যারাডক্স, অনন্ত বিরোধাভাস
তোমার প্রসঙ্গ ছাড়া, অন্যত্র
জন্মান্তর বিশ্বাস করি না।
সাপের জিভের মতো আমার আঙুল
স্বভাববশত ট্রামে, বাসে, জংশনে, ক্যানিং লোকালে
সহস্রচক্ষুর মতো ঘোরে।
অশরীরী ব্লেড পকেটে ঘুমায়
রক্তের গন্ধ শোঁকে সহযাত্রিণীর
নৌকার হালের কথা মনে পড়ে
হাতদুটো জল কেটে কেটে দূরগামী।
অথচ পায়ের পাতা গাছের গুঁড়ির মতো
পূর্বাপর স্থাণু
ছত্রাক জমে জমে বদলে গেছে
চামড়ার রং।
====================================
প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা
একাকী পাঠক
**************
তুমি নদী আনতে গেলে
আমি ভাঙা নৌকো নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে
তুমি কুড়োতে গেলে সবুজ
বসত ছেড়ে উড়ে গেল বনটিয়ার ঝাঁক
তুমি যখন শুদ্ধ বায়ুর খোঁজে গেলে ফের
তোমার আসার আশায় ঋতুগুলো মরে গেল
অতিমারীর চরে
আমার জন্যে রেখে গেলে নিউনর্মাল সিলেবাস
আইসোলেশন পাঠ....
====================================
মীরা মুখোপাধ্যায়ের কবিতা
সিঁয়াস
********
আলোকে আড়াল করে কালো পর্দা
ঝুলে আছে সংকেতের মতো।
তুমি কি ওপাশ থেকে ঘরে ঢুকবে?
ওদিকে বারান্দা আর বারান্দায় বুগনভেলিয়া
আত্মহননের আগে কার কথা ভেবেছিলে তুমি
অথবা প্রত্যক্ষভাবে আমিই কি....
বাইরে বৃষ্টি নামলো
আমার আঙ্গুল কাঁপছে , নরম মোমের আলো
গলে যাচ্ছে তীব্র দোলাচলে।
কুন্ঠিত পায়ের শব্দ আগে হয়তো খেয়ালও করিনি
আজ কান পেতে আছি।
ভিজে যাচ্ছে বুগনভেলিয়া
====================================
তৃষ্ণা বসাকের কবিতা
মৃতদের কার্নিভাল
*****************
এসো কার্নিভাল এসো,
ময়ূর পাখাটি পিঠে বেঁধে নিয়ে এসো
চাঁদ ভেসে যায় গঙ্গাজলে...
পরপর নাচ আসে,
শক্তি সংঘ, আমরা কজন,
সিঁদুর ও নাচ হয়,
তেল মুখ, তেল-তেল মুখ
তেল হাসি, তেল-তেল হাসি
বসে দেখে,
এসো কার্নিভাল এসো, লাশ-নৃত্য হোক,
চাঁদ ভেসে যায় গঙ্গাজলে...
ঘটের সরল ডালপালা
নিজেরা নিজেকে খায়,
অটোফাজি,
পাঝাড়ার পাজি!
আমি দীর্ঘ হাত দিয়ে লেবু পাড়ি,
বহুদিন আগে, গ্রামসুদ্ধ মরে গেছে,
শহরের ট্রেন, জানেনি সেসব গূঢ়,
ভুল করে থেমে যায় আজও,
নীল প্লাটফর্ম ধরে
হেঁটে আসে
মৃত মানুষের এই গ্রামে!
====================================
তৈমুর খানের কবিতা
দ্বৈতস্বর
**********
আলোরাও অন্ধকার
অন্ধকারও আলো —
শব্দও শব্দহীন
শুনতে পাও নীরবের কথাগুলো ?
====================================
রবীন বসুর কবিতা
কবিতার অনন্ত যাত্রা
*******************
কবিতার প্রসন্ন হাত আজ বড় মলিন
সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী,ভাইরাস আতঙ্কে কাঁপে দেশ
মৃত্যু সে তো অক্ষরের সীমানা অতিক্রম করে
ছন্দের কৌমার্য খেয়ে অলংকারে বৈধব্য আনে!
নিপাট গদ্য থেকে যে অগ্নি সর্বভুক
জন্মান্তর পার হয়ে বাংলা কবিতার পুনর্জন্ম দ্যাখে :
তাকে পাশে বসিয়ে শঙ্খ ঘোষ ক্লাস নেন
শক্তি তখন পোড়াকাঠ নিয়ে উন্মাদ…
তরুণ কবির কাঁধে ভর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে সময়
মাস্ক পরিহিত হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে
কবিতা এখন সংক্রমণ মুক্ত হবে… কেননা,
সভ্যতা তার ঘাড়ে পা রেখে অনন্ত যাত্রায়…
=================================
=================================
শমিত মণ্ডলের কবিতা
জন্মভূমি মাতৃভূমি
******************
এখনো জেগে আছে রাতের এই নদী
নীরবতা বুকে নিয়ে জেগে আছে ঘাট
"দেখো, অনন্ত প্রবাহ একমুখী, শাশ্বতের দিকে
তার অভিমুখ" --- গুরু বললেন তার নতুন শিষ্যকে।
"চঞ্চল হয়ো না তুমি,স্হিতপ্রজ্ঞ হও"।
শিষ্য তাকালো বিস্তৃত আকাশের দিকে
চাঁদ নেই, তবে তারারা জলের দিকে ঝুঁকে আছে
বেদ- বেদান্তের কথা তার মনে পড়ল না
এমনকি, মনে পড়ল না ধ্যানমন্ত্রের কথা
তার মনে এল ছায়াগ্রাম , কুঁড়েঘর, উঠোনের লাউমাচা।
====================================
সৌমনা দাশগুপ্তের কবিতা
পাখির আবাস
***************
ঢেউ ওঠে ঘোলা জলে, সাপ শুধু সাপ
পাগল আমাকে ডাকে স্রোতে
সেইখানে ঝুঁকি আছে, বেনোজল
কালো ও গম্ভীর সেই ব্ল্যাকহোল
ছবি থেকে অবয়ব, মুখ থেকে পাখির আবাস
কোনদিকে যেতে হবে আমাকে বলেনি
কোনও মনোবিশারদ
জানলায় উঁকি দেয় বন্ধুদের মুখ
অথবা জানলা নয়, দিনমানে
জানলা ভেবেছি তাকে আমি
অহেতু বিভ্রম থেকে খুলে আসে ডানা
আজ তবে সুর তুলি, বলো সুর তুলি
বলো তবে বলো বলো, কোন আঙরার স্তুপে
গিয়ে আমি খুঁজে পাব স্রোত ও সিঁড়ির
সেই কলহপ্রপাত, জলাজমিশব্দ
পঙ্ক্তিময় গাছেরা শুধু ছড়িয়ে দিচ্ছে মায়াতাস
====================================
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা
কুয়াশা রাতের পরিধি জুড়ে
*************************
এইভাবেই একদিন আমাদের দেখা হবে
গাছ থেকে সব জল ঝরে গেলে
শীতের ভোরে পুকুরের জলে
পাতলা সরের মতো নেমে আসবে সন্ধে
পাখির ডাকের আচ্ছাদন থেকে আমরা
কয়েক হাজার ক্রোশ দূরে চলে গেছি
ফিরে যে আসা যায় তার কোনো পদছাপ
আমাদের কেউ কখনও দেখায় নি
বিকেলের বৈশাখী আঁচলে
এখানে অন্ধকার ভাঙে না
কুয়াশা সন্ধের আবছা চৌকাঠ পেরিয়ে
যে কটা পা দোকানের হাতল পর্যন্ত পৌঁছে যায়
শুধুমাত্র সিলভারের চাকতি মাথায় না থাকায়
তাদের দাঁড়াতে না দিয়ে আরও দূরে ঠেলে দেয়
কুয়াশা রাতের পরিধি জুড়ে
কিছু চারাগাছ নামতা পড়ার সুরে শরীর দুলিয়ে
জল কোলাহলের গায়েই জেগে উঠছে
এবার আমাদের দেখা হোক ।
====================================
নিলয় নন্দীর কবিতা
অশনিসংকেত
**************
ঠিক এখানেই একটা পাহাড় ছিল।
আর ওইখানে ঝর্ণা।
পাহাড় ঝর্ণা কোথায় কিভাবে রাতারাতি উবে গেল
সব, জিজ্ঞাসা করিনি। এখন সেখানে কয়লাখাদান
আর ক্যাফেটেরিয়া। কফির কাপে ডিনামাইট। প্রেমে
অশনিসংকেত। পাইনের বন থেকে টুপটাপ ঝরে
পড়ে মাংসের ঘ্রাণ। এ সময় পাহাড় বাহুল্য, ঝর্ণাও।
যত অস্থিরতা তত নান্দনিক
যত নান্দনিক তত অস্থিরতা
শুধু কবিতা লিখি বলে
ভরা বসন্তেও পিষে দিয়ে যায় হলুদ ট্রাক।
====================================
রঞ্জনা ভট্টাচার্য্যের কবিতা
ঝুরো বাতাস
*************
অপলক দৃষ্টিতে তাকাবো বলে
তপস্যাভূমিতে মিলন চেয়েছিলাম;
কোনো আলিঙ্গন ছাড়াই আমার অপরিচিত এই দেহে
দিয়েছি পেরেকের আনন্দ,
কফিনে শেষ পেরেক ঠুকতে গিয়ে_
দুটো ডালভাতের সংস্থান দিয়েছি শরীরকে
এর বেশি কিছু চাইতে গেলে পাঁজরকে খাঁচা বানাতে হয়,
সেখানে রাখতে হয় একটা ছোট ফাঁক --
আসবো আর যাবো, যাবো আর আসবো,
ঠিক ঝুরো বাতাসের মতো।
====================================
সুস্মিতা গোস্বামী সরকারের কবিতা
নিঃশেষ
*********
মিছে ডাক দাও কেন?
ফুরিয়ে যাবার অভিমান শুধু তোমার একার নয়।
তিলেক ফারাকে যবে বিষ তুলে দিলে নিঃশ্বাসে..
ক্রমে ক্রমে দূরে সোহাগী স্বপ্নের সমর্থ লীলা..
অনন্ত ঘোলা গাঙে মেটে পাত্রে মাটি হবো বলে!
সেদিন থেকেই ক্ষয় বুকের সুবাস, চন্দনের মত!
আরও কাছে থেকে যাবো বলে..
গাঢ় অনুযোগ কাজলের মেকি সংলাপ, লাস্যের ঢেউ ঠেলে..
স্বাগত তোমায় আমার আত্মজন..!
বিপ্রতীপ ঝড় তোমাকে অন্ধ করে.. আমি সন্নিহিতের হাত বাড়িয়েছি...
অনুরাগ সুরে সুরে বিবাগী বাতাস হবো বলে..!
====================================
দেবাশিস তেওয়ারীর কবিতা
মিঠি
******
মিষ্টি মিঠি ছড়িয়ে আছে জলে
তোমরা যারা সদলবলে
জলের মধ্যে নাইতে গেলে
মিষ্টি দুটো চোখ
বাড়িয়ে দিল দু'খানি পা----জলের সম্ভোগ
একটিমাত্র ঝোঁক
দূরে দেখছে আগুন তেজে
গনগনে ওর চোখ
সে-কী ভীষণ রোখ
মিঠির গায়ের বাকল থেকে দু'একপশলা মায়া
খেলিয়ে দিল আলোর মধ্যে ছায়া
সেই ছায়াতেই দাঁড়িয়ে থাকা গুষ্টিকয়েক লোক
দেখতে পাচ্ছে মিষ্টি মিঠির
গনগনে দুই চোখ
====================================
সরিৎ দত্তের কবিতা
খ্রীষ্টিয় চটি সিরিজ
*******************
৩.
তারপর নিভে আসে অপেরার রাত
অতিক্রান্ত মুহূর্তগুলিও
ধাতব ঘণ্টার মতো প্রতীক্ষাপ্রবণ
নিরালম্ব ভোর নামে
বেগুনী আখের ক্ষেত জুড়ে
নাগরিক প্রহরযাপনে ক্লান্ত ঈশ্বরপুত্র
কাঁধে তুলে নেন ক্রুশ
একাকী হাঁটার কথা ছিলো তাঁর
তবু কী গভীর অনুষঙ্গে
একটি বিচ্ছিন্ন সারস
নির্জনে অনুসরণ করে তাঁকে
ধ্যানের গভীরে জেগে ওঠে মৃত্যুপ্রতীতি ...
====================================
দেবাশিস ঘোষের কবিতা
ফেলে দেওয়া এক ঝড়ের কথা
*****************************
আমি এক ঝড়ের সন্ধ্যা ফেলে এসেছি আপনার ছাদে
তবুও আপনি আমায় কিছুই বলেন নি
আমি এক আগুনখেকো উদ্ভিদ কাঁধে হেঁটেছি দু'হাজার রোদ্দুর
তবুও ভোর ফুটে ওঠেনি সন্ধ্যা তারা হয়ে
আমার শরীর জুড়ে হাজার হাজার টন অবসন্নতা
ঝেড়ে ফেলার মতো জায়গা পাইনি কোত্থাও
চারিদিকে এতসব পুতুলের মুখে আশ্চর্যজনকভাবে
শিরা উপশিরা ভর্তি রক্ত মাংস রয়েছে এখনো
আমি সব পাথর চিনেছি, উপত্যকা আর নুন চিনেছি
বড় কষ্ট হচ্ছে পিঠের উপর এক জ্বলন্ত তারা বয়ে চলা
পুড়ে যাচ্ছে চামড়া, মুখ, আর অবশিষ্ট চুল
এতসব সয়ে সয়ে হেঁটে চলেছি শুধু দেখব বলে
সেই ঝড় এতদিনে কতটুকু বেড়ে উঠেছে
====================================
মঞ্জরী গোস্বামীর কবিতা
আহুতি
********
সমাদর চাইতে বোলো না
যুগ যুগ ধরে দেখে গেছি
বলির খানিক আগে
চন্দন চর্চিত স্নানের অভ্যর্থনা
মালায় কুঙ্কুমে ছাগশিশু ভুলে থাকে
খড়গের ধারালো পিপাসা
মাটির ভিতর থেকে তিল তিল খোরপোষে
ফলের শরীরে জাগে মনলোভা রঙ
পতনের সামান্য আগে
অস্তাচলের আলো
বড় বেশী কুহকিনী
ম্লান করে দেবে সব
উদয়ের পথে আসা রাতুল বিভোর
জীবন আহুতি চায়
ঘুম পাড়ানির গানে
তুমি তাকে বড়জোর দু'প্রহর ভ্রম দিতে পারো
=================================
=================================
অসিত মন্ডলের কবিতা
মায়াবী বিকেল
****************
মনখারাপী অক্ষর দিয়ে অপেক্ষার নাম রেখেছিলাম শূন্যতা
এক মায়াবী বিকেল সে নাম মুছে দিল অনায়াসে
কাল রাতে ঘুম আসে নি দুচোখের পাতায়
টুকরো টুকরো করে আকাশের চাঁদ ছিঁড়েছি সারারাত নিজস্ব ওয়াশরুমে
একটা সুগন্ধি বিকেল আমাকে চেনালো ভালোবাসার দেশ
হলুদ বাসন্তী আদর
পরিষেবা সীমার বাইরে থাকা মুঠোফোনও জীবন্ত হলো
ভালোবাসাও এক পর্যটন
কাছে কিংবা দূরের অনির্দিষ্ট গন্তব্যে
এজন্য লাগে সুচারু ট্যুর প্ল্যানিং
গুগল সার্চ অগ্রিম বুকিং পরিপাটি প্যাকিং
যাত্রা শুরুর আগে নির্ঘুম উদ্বেগ
এক অতলান্ত বিকেলে আমি পরে নেব ডুবুরির পোশাক
====================================
সন্দীপ রায়ের কবিতা
খিদে
********
শরীরে মুখ গুঁজে থাকি সারারাত
যেভাবে অন্ধকার লেপ্টে থাকে আকাশের গায়ে,
আমার সকাল--
তন্দ্রা জড়ানো চোখে নেশা
তবু খিদে মেটে না।
অনিচ্ছায় মুখ তুলি শরীর থেকে ,
বটের আঠার মতো চটচটে ঘাম--
চেনা গন্ধে ভাসে বিছানা পত্তর ...
====================================
রাখী সরদারের কবিতা
একটি নশ্বর মুখ
****************
১.
যদি বলি আধঘন্টার জন্য,
না,তাও নয়,আধমিনিট
তাকে পুষে রাখো চোখের তারায়,
থমকে দাঁড়াও কিছুক্ষণ
সেই মেয়েটির ওষ্ঠ তূণীর ছায়ায়...
পারবে না?
২.
দ্যাখো,বেঁচে থাকাটাই
একটি শাশ্বত কবিতা...
৩.
শার্দুল অন্ধকার ছাপিয়ে
অজস্র হাওয়ার শব্দ,
ধানের মঞ্জরীত শীষে একপ্রকার
রোদের উপাখ্যান ... সমস্তই
তার নিষ্কলুষ অস্তিত্ব
৪.
মেয়েটি খুব এলোমেলো, বোকা,
দেহে কোনো ধার নেই ।
এখন,ফিনফিনে চোখের জলে
খোঁজে এক নশ্বর প্রেমিকের মুখ..
আর মনে মনে বলে ...
বেঁচে থাক
আমাদের মাটির ভালোবাসা।
====================================
ভগীরথ সরদারের কবিতা
দূর থেকে
***********
দুপুর হলে গাছেদের ঘুঙুর বেজে ওঠে, শাখায়–পাতায়
গানের সুরটুকু কখনো নদী , কখনো ঝরনা হয়ে বয়ে চলে খাদে
পাহাড় সমান দুঃখ জমাট বাঁধা বুক
সেই বুকের বাঁ–পাশ দিয়ে একটা জাহাজ চলে যায় ৷
আমি দূর থেকে তাকে বন্দরের রাস্তা দেখিয়ে দিই
আমি দূর থেকে তাকে টা-টা করে দিই ৷
====================================
সমর্পিতা ঘটকের কবিতা
পরাবাস্তব
***********
লোহার নাল লাগানো খুরওয়ালা পা
বুকের ওপর দিয়ে হেঁটে যায়
রাত গভীর হলে,
তখনই...
সশব্দে উল্কাপাত হয় বৈকাল হ্রদে,
আর বালিহাঁসগুলো উড়ে যায়,
বালিশে কান পাতলে
শোনা যায় ওদের ডানার শব্দ...
আপাত শান্ত সরোবরের গহন অন্তঃপুরে
যক্ষ যক্ষিণীর চুম্বন ঘিরে এমন দিনেই
ঢি ঢি পড়ে যায় আসমুদ্রহিমাচলে...
====================================
মৌসুমী রায়ের কবিতা
ফেরা এবং না-ফেরা
********************
তুমি ভাবলে আমি ফিরছি
অলস বিকেলের ক্লান্তিটুকু মেখে
ধুলোর পথে যেমন ফেরে গরুর পাল
ব্যাকড্রপে গোধুলির ভার্মিলিওন
অন্ধ রাখালের ছপটি ওঠে নামে
অপার্থিব ফোটোট্যাকটিকে
আবেগী পাতাদের ঝুপসী আঁধার
সন্ধ্যাদীপের আলোকিত রিংটোন
মেঠোপথের সোঁদা গন্ধ হারিয়েছে
কুমারীর ঘ্রাণ ,অযোনিসম্ভূত
পুতুলনাচের অদৃশ্য টানাপোড়েন
বুনে চলে নতুন নকশীকাঁথার গল্প
সভ্যতার উর্বর পলি ষোড়শ মহাজনপদ
পেরিয়ে সপ্তাশ্বের জোর ফুসফুসে এখন
আকাশ ছুঁয়েছে ভাইট্যাল ক্যাপাসিটি
তুমি নিবিড় ডাকলে হয়তো আসতে পারি
কিন্তু ফিরছি না বিলকুল...
সব ফিরে আসা আদতে ফেরা হয় না ।
====================================
বিশ্বজিৎ- এর কবিতা
মূর্খের গান
************
প্রতিদিন নিঃস্ব হই
প্রতিদিন আলো আসে ঘরে।
এভাবে মরতে মরতে
কাগজ, কালি ফুরায়
কখনও তুমি ফুরোয় না...
====================================
সায়ন্তনী হোড়ের কবিতা
ছায়াকথার ইতিবৃত্ত
******************
এক তীব্র উচ্চারণে
ভেঙে যাচ্ছে সবুজ মাঠের শূন্যতা
আকাশের ছকে আটকে গেছে
ব্রহ্মান্ডের রামধনু
ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে আসছে
কথোপকথনের সমীকরণ
বেহিসাবী সন্ধ্যের পাড়ে এখনও হেঁটে বেড়ায় এক জটমুক্ত সম্পর্ক
যেখানে উদাসীনতার পাশে প্রজাপতি এসে বসলে
বেরঙিন স্রোতের সৃষ্টি হয়
অদৃশ্য ভাষায় বাঁধা এই জীবনের কোণায় কোণায়
লুকিয়ে থাকে ছায়াকথার ইতিহাস...
====================================
দীপশেখর চক্রবর্তীর কবিতা
মরূদ্যান
**********
তুমি ছাড়া
একটা মানুষও নেই এখন যার সাথে অনেকক্ষণ বসে থাকা যায়।
অথচ রোদের ভেতর বসলে
আমার ছায়াই বা কতটুকু?
অথচ একটা পিঁপড়ে কতক্ষণে পার করে এই সামান্য-
এবারে সে পার করবে তোমার ছায়া
একটা মরূদ্যান পাবে
খুব কম আলোর মধ্যে মাঝে মাঝে একেকটা কথা
পাতার ঝিরিঝিরি সৃষ্টি করে
নির্বাসন ভেঙে এই যে তুমি এলে,আমার দুচোখে যথেষ্ট আনন্দ তো?
ভয় হয়, নীরবে খুলে দিই একটা জানলা
রাস্তার জমা জলে একটা পাতা এসে পড়ে,
তিরতির করে তাকে কাঁপিয়ে হাওয়া চলে যায় বিচ্ছেদের দেশে।
সম্পর্ক এভাবে
কাউকে কিছুই না বলে একটা পিঁপড়ে হেঁটে চলেছে
আমাদের ছায়া দুটি পাশাপাশি রেখে।
====================================
রবিন বণিকের কবিতা
রাষ্ট্র ও স্নানঘর
****************
ফুটপাত যেখানে সমাপ্ত সেটাই আমার দেশ
পথবাতি যতদূর হেঁটে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে
সেখান থেকে শুরু হয় আমার দেশ
যে উত্তাপে পচন ধরে ভাত সে উত্তাপ আমার দেশ
যে বরফ আমার রক্তকে বাধা দিয়ে বলে ওটা তোমার গন্তব্য নয়, সেটাই আমার রাজধানী
যে আলোয় ধর্ষকের জন্ম সে আলোয় খুলে রাখি আমার উদ্ভিদের পুস্তক
আমরা দেশ বলতে বুঝি আয়তন
আমাদের রাষ্ট্র বলতে বোঝানো হয় ঝোপের মাতৃভাষা
আমরা এবং রাষ্ট্র আসলে একটি উন্মুক্ত ব্যবহৃত স্নানঘর–
=================================
=================================
কুবলয় বসুর কবিতা
চূড়ান্ত
********
কীভাবে পেরিয়ে যাব সিগনাল
হু-হু ধুলো হাওয়া... ঠোঁট চাটছে মন্তাজ
এ সকল ফারাক উত্তেজনায় নোঙর ফেলছে,
জলের ট্যাঙ্কের পাশ দিয়ে সিঁড়ি উঠে গেছে
আত্মহত্যা কতটা সহজ হবে দেখে নিতে
চল রে দুপুর, বাড়ি ফাঁকা-
লাট খাওয়া ঘুড়িগুলো জড়ো করে
এইবার ঝাঁপ দিই, কী প্রবল ক্লাইম্যাক্স!
অন্য কোনো সিনেমার গল্পে কেউ
মিল পাবার আগেই
আমাদের জন্য হাততালি ছড়িয়ে পড়ুক।
====================================
রিমলী বিশ্বাসের কবিতা
হেমন্তের কবিতা
*****************
শিশির দিয়ে আইসকিউব ফ্রিজের শীতে নভেম্বরে,
খুব পুরোনো ওয়াইন যেন, হেমন্তকাল, নেশায় ধরে!
লেবুপাতার গন্ধ মেশাই, টলটলে বুক, রাতদুপুরে!
কে যেন আজ বইছে ভীষণ, শরীর জুড়ে, শব্দ করে!
যেমন ছিল সেকাল তেমন একালেতেও প্রেম বেশি পায়,
হেমন্তকাল রুপোরকাঠি, ঘুম পাড়িয়ে স্বপ্ন দেখায়!
বিশু পাগল নন্দিনীকে যে রাত্তিরে গল্প শোনায়
তুমিও আসো অন্ধকারে,চাঁদ ভিজেযায় ছাদের কোণায়!
কে বলেছে একটা জীবন অনাবশ্যক ফুরিয়ে যাবে!
তেমন করে বাঁচলে দেখো আলোকবর্ষ ফেরত পাবে।
কেমন করে? যে জীবনে ইচ্ছে-যাপন তোমার হবে,
সে ইচ্ছেতে ফিরবে তুমি? ফিরবে বলো, আবার কবে?
====================================
দীপাঞ্জন দাসের কবিতা
জ্যোৎস্না, আকাশ ও নীল রঙ
***************************
সন্ধের নিঃশ্বাস, বাদামী আভা, ধুয়ে যাচ্ছে মানুষ, কলরব।
আমাদের দূরত্ব দুই রাত্রির। ভোর ও বিকেল মিশেছে উপত্যকায়।
কালো পাখিগুলো উড়ে গিয়েছে কোন ভোরে।
ছদ্মবেশে কুয়াশার থেকে চেয়ে নিয়েছি রোদ।
সেই ঝংকারে বাজনা বাজে, ছড়িয়ে পড়ে অমরত্ব।
শেষ প্রহরের এঁটোকাটা সরিয়ে দেয় জ্যোৎস্না।
শূন্যের মাঝে ভেসে ওঠে হাওয়া-মুখ। সব কোলাহল শেষে
অক্ষরেখা বরাবর হেঁটে চলে আমার শরীর,
কয়েকটা রংপেন্সিল আর অভ্যাস...
====================================
নবনীতা চক্রবর্তীর কবিতা
উড়ান শেষ হলে
***************
নোনাধরা বাড়ির পাঁচিল থেকে
সোজাসুজি কতগুলো রাস্তা বেরিয়ে আসে
একবার হাঁটা শুরু করলে
সহজে আঁকা হয়ে যায় উপন্যাস--
ফাটলের গায়ে অশথের শিকড়ের মতো
যেখানেই ফাঁক সেখানে ফাঁকি নেই ছোটার
অক্ষরজমি,তুমুল হাতড়ে খুঁজি--
লাল টিলা বাংলো...টিয়াপাখি...দুএকটা গুলঞ্চঝোপ…
সোনালী নদীর পাড় ঘেঁষে আচমকা ঝোড়ো হাওয়া!
এলোমেলো;ধুলো মাখে পলকাটা পোশাকি অক্ষর--
মুহূর্তে জড়ো করে
মৃত ভায়োলিন...নতজানু কুয়োতলা
...কয়েকটা ভীতু কাঁটাগাছ...
তড়িঘড়ি আড়িপাতি উপসংহারে--
সূক্ষ্ম কারুকাজে বুনে ওঠে
আস্ত এক চোখের জল ঝিল!
স্বপ্নের সোনালী হরিণ
কখনও বদলে যায়
রগরগে লাল কালিয়ায়!
====================================
অভিজিৎ দাসকর্মকারের কবিতা
যে দ্রাঘিমা শেষে
*****************
দু'জনের নাম লেখা হলো না গুপ্তাঞ্চলে। গুপ্তাঞ্চল মানেই
যৌনগন্ধি নয়। সেই জায়গায় ছিলো
আকাশ আর আলপথের আলাপ
১টি বৃক্ষের অপেক্ষা, আর
আমাদের একসাথে আঙুলে আঙুল না-ধরা---
লালিত্য হাসি আর চোখ ভরা দৃষ্টি নিয়ে যে দ্রাঘিমা শেষে
বুক বেঁধে চলে গেছিলাম!
এখনও অনেক ঘুম বাকি, হারিয়ে যাই স্বপ্নের হাত ধরে
সেদিন আবার আসবো তিল কোলে শিউলি গন্ধ নিয়ে, তাই
শ্বাসমূলে জল দিচ্ছি রোজ।
ওগো সেপ্টেম্বরি সাপ্টা বিকেল, প্রাচীরের কোণে হাত রেখে
তুমি শুধু থেকো আমার অপেক্ষার ফল হয়ে
===================================
পল্লব তেওয়ারীর কবিতা
পঞ্চভূত
★ ক্ষিতি
সহিষ্ণুতা আর ধৈর্যের বাঁধ
তৈরি করেছে মহাজাগতিক বিস্ময়
আমার শেষ পারানির সম্বলটুকু
আজ ধারণ করেছি দক্ষিণ হস্তে
পায়ের যুদ্ধে কেউ টলাতে পারেনি
দার্শনিক সত্যে তবু কম্পিত
নিষ্পলক বসুধা।
★ অপ
প্রবাহের কী বিশাল মাত্রা!
সৃষ্টি থেকে ধ্বংসের শরীরে
অনাবিল আনন্দে মার্গদর্শন
সজীব স্মৃতির গতিপথেে
ব্রহ্মাণ্ড জেগে আছে
বাঁশঝাড় হাঁটু ভিজিয়েছে জলে।
★ তেজ
দগদগে ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার মতো
সবুজের যত আবরণ
একে একে খসে পড়ছে
এক লহমায় সকলে পুড়ছি
যন্ত্রণায় ভেসে উঠছে নিরোর গিটার।
★ মরুৎ
নিশ্বাসের ভরসা না করাই ভালো
আর আছে যত সাদা-কালো
গুচ্ছপ্রাণের গান,ছন্দ,স্পন্দন
শনশন বয়ে যাচ্ছে নীরব শরীরে
বুকের বাতাসে আজ হৃদয় কুঠুরি খুলে রাখো।
★ ব্যোম
বজ্রপাত, আলোর ঝলক গ্যাছে থেমে
সুবিশাল আশ্রয়
বেদবাক্যে খুঁজে পাই অবয়ব
আজব সমাধিগুলো ভেসে উঠছে
ইশারার অন্তিম আকাশে।
===================================
শীলা দাশের কবিতা
মন কেমনের চিঠি
*****************
এই খামের ভেতর
নীলকণ্ঠ পাখির একটি পালক দিলাম
আর নষ্টকথা রাগ অভিমান
এই মনকেমনের চিঠি
ইচ্ছে হলে খুলে পড়তে পারো
না হলে বেঁধে দিও পাখির ডানায়
ডানা ছুয়ে আছে অনেক রক্তকণা
সম্ভোগ মাখানো অকারণ ভুল
নষ্ট করে দিও বাসন্তিকা ফুল
না হলে বৃষ্টিদানায় লেখ
নষ্টপ্রহরের বিপন্নতা, সকল দহন
আর পদস্খলন।
====================================
সুতনু হালদারের কবিতা
বাসা
******
এরপর বানান নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি শুরু হ'ল
দুই পক্ষই যুযুধান
এক পক্ষের খেলোয়াড় স্বয়ং স্বরবর্ণ
অন্যপক্ষে ব্যঞ্জনবর্ণ
এক্ষেত্রে আলাদা করে বর্ণভেদের প্রয়োজন নেই
ইতিহাস আর মাকড়সা
নিজেদের জালকেই বাসা ভাবে
====================================
পৃথা চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
আলোক মুহূর্ত
***************
পূবদিকে অখন্ডিত আলোক মুহূর্ত
নভেম্বরের ধূসর সকাল সেজেছে
তিমির বিদারী মাধুর্যের রূপকল্পে
সবুজ পোশাকে ঢাকা সিক্ত চরাচর
নারীত্বের রমণীয় কৌতুহল আজ
প্লাবিত করুক তোমার দেহকণা
পাপ আর পুণ্যের শরীরী বধ্যভূমি
আলোর আঁচলে আঁকা হোক পূর্বাপর
====================================
নন্দিনী রায়ের কবিতা
বেলুনওয়ালা
**************
তোমার কথা ভাবলেই গলার কাছে বাষ্প জমে
চোখের কোনে ঝিলিক
কলম এগুলো দিয়ে আঁকিবুঁকি কাটে
তুমি তার নাম দাও মেধা
আর আমি কবিতা।
আমার জীবন বিপদসীমা অতিক্রম করে না
তুমি যথারীতি বানভাসি।
যে বেলুনওয়ালা থাকতো তোমার গাঁয়ে
তার বুকের বাতাস লাল নীল রঙে উড়ে গেছে
এখন তার কাছে কেবল সাদা রঙের বেলুন।
তুমি সেই সাদা বেলুনটি ধরে অপেক্ষায় থাকো
আর আমি হাঁটতে থাকি অযুত-পথ
পৌঁছনো হয় না আমার...
====================================
====================================
বনশ্রী রায়ের কবিতা
রাত - চাঁদ কথা
****************
ষোড়শি চাঁদের বুকে লেপ্টে থাকা
গাঢ় রাতের নষ্ট দাগ ৷
ইথারে সিম্ফনি ধুন ভাসছে ৷
ছায়া সংঘাতে শ্রান্ত প্রেম,
ব্যথা ব্যবসায়ে হাটে বাজারে নিলামে চড়ছে ৷
জেরায় জেরায় বিষণ্ণ রাত - চাঁদের ভালোবাসা ৷
আঙুলের ডগায় ঋণী কথার ভিড় ৷
আদালত এজলাস ৷ গীতা বাইবেল ব্যবধান ৷
প্রতি শিরায় অভিশপ্ত নষ্টালজিয়ার দেওয়াল ৷
ভাঙছে নোনা ইট ৷ চাঙড়। অর্হনিশ ৷
চোখ বেঁধে বিচার মানদণ্ডে পাপ মাপছে ৷
মুখ থুবড়ে ঘুমহীন অংকের ভাগশেষ ,
জ্বলন্ত চুল্লীতে পুড়ছে ৷
====================================
সুবিৎ ব্যানার্জির কবিতা
বাঁটোয়ারা
***********
চলো আজ থেকে আমরা ভাগাভাগি করে নিলাম সত্যি মিথ্যে।
তোমার সত্যি তোমার রইল আমার সত্যি আমার।
মিথ্যেটাকেও তেমনি করে বেঁটে নেব দুজনে, কেমন।
একই চশমার দুটো পাওয়ারের দুচোখের কাচ যেন। ডান
চোখের পাওয়ারে বাঁ চোখ ঝাপসা, আর বাঁয়ের পাওয়ারে ডান।
====================================
সোমা কুসারীর কবিতা
পরোক্ষ উক্তি
**************
ঝোলের গরম ভাপে ফোড়নের মতো
না বলা কথারা বুড়বুড়ি কাটে
মুঠোফোন রিংটোন প্রতীক্ষা প্রহর
আলজিভে লেগে থাকা কালশিটে দাগ
দিন যায় দিন যায়...
হেমন্ত বিকেল
গড়ানো অন্ধকারে
ফসলের ঘ্রাণ
স্নায়ু জুড়ে যুদ্ধের আড়বাঁশি বাজে
কথারা প্রলাপ হলে
বাকিটুকু থাক
====================================
সৌমী আচার্য্যের কবিতা
স্কেচ
*****
আশ্চর্য এক মুখ, দেখা যেন আরো অলৌকিক।
ভাবি তেপান্তরের রূপকথা অথবা বাঁচার ইচ্ছেডানা।
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ঘোলাজলে ফসফরাসে সবেতেই জীবন আঁকে।
বেনিয়ার চক্রব্যূহ টুংটাং শব্দে অতিক্রম করে ভালোবাসা।
সাধনার গল্প নষ্ট ক্ষত ঝিঁঝিঁ ডাকা রাতে একলা দোসর।
এরপর শূন্য থাকে সব পাশে হাত বোলালেই ঝরে জ্যোৎস্না।
লুনাটিক।খাতা জুড়ে এলোমেলো হাওয়া আর সেই মেয়েটা।
====================================
কৌশিক দাসের কবিতা
ত্রিতাল
*******
ঠোঁটের বৃন্তে ফোটাতে যা ছিল মানা,
প্রতিবার আমি তাই নিয়ে ফিরি সম-এ।
চাঁদ বুকে রেখে গোপন হাস্নুহানা,
জ্যোৎস্নার কথা লিখে রেখে যায় মোমে।
রাতের আগেই সকালের হাওয়া ফেরে,
ছায়ার শরীরে জমে ছলনার ভার।
মুখোশের দায় আয়নার কাছে হারে,
প্রতিটি ট্রেনের কার্শেডই সংসার।
তিনটি তালিতে বাঁধা হতো সব যদি,
ষোলোখানা ফুল ফোটাতাম প্রতি ঘাতে।
জীবনের নাম রাখিনি যে সমপদী,
একা ফাঁক তাই বেজে যায় সন্ধ্যাতে।
====================================
জয়া বিশ্বাসের কবিতা
প্রতিশ্রুতি
************
কিছুটা আকস্মিকতা
তার বেশি কিছু নয় !
নিশানা এঁকে রেখেছিলাম যদিও
পাহাড় চূঁড়ায় পৌঁছানোর আশা রেখে !
সম্ভাবনার যা কিছু ছিল
হার মেনেছে সময়ের কাছে-
অথচ নিখুঁত এক নিশানা এঁকেছিলাম ।
তবে কি পথ হারিয়েছিলে তুমি,
হে পথিক ?
গোধুলি মেঘের অবসন্নতা আজ
ক্ষীণ আলোর রেখাটিও বড়ই ম্রিয়মান !
কালের নিয়মে সেও যাবে নিভে একদিন
শুধু বনপথে আঁকা থাকবে নিশানা -
অনন্তকাল ধরে একইভাবে !
====================================
তারকনাথ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা
মায়াবী
********
কথারা ফুরিয়ে গেলে
কবিতায় কথা বলি এসো,
শব্দের বদলে এসো ধান বুনি,
পুকুরের ধার ঘেষে লেবু আর লঙ্কার
কচি চারা বুনি কিছু,
জলেতে বিছিয়ে দি সবুজ আদর,
পুঁইয়ের ডগাটা বড়ো নধর হয়েছে,
মাচা গ'ড়ে এসো ওকে
ছন্দে বেঁধে দি,
মেঠো বাতাসের বুকে যাপন কথারা
আভাসিত হোক আজ
মায়াবী ঘ্রাণে!
====================================
ঈশানী রায়চৌধুরীর কবিতা
কেন যাব
**********
যেতে হবে!
তবু রোদালো দুপুরে তীক্ষ্ণ চিলের ডাক....
মাছরাঙা ছোঁ মারে বহমান কালে -
একটা হামাগুড়ি দেওয়া শিশু তীব্র টানছে!
বিকেল নামল -
সন্ধ্যে এলে তারাবাজি জ্বলে মিঠে আকাশের পিঠে,
হিম কুয়াশার কুহকে জড়ায় মাঠ -
স্বাস্থ্যবতী ধানের গর্ভে জাগে ভ্রূণ!
'আগামীর'
পৃথিবীর গূঢ় গান শোনা যায় নিকষ নিশীথে,
ফুলের বোঁটায় ফোটে আলোকের ডাক
আকাশপ্রহরী দেয় নিঃশব্দ নির্দেশ!
জেগে থাকো
এই আকণ্ঠ অন্ধকারের তুমুল নেশায় চুর...
তরল শান্তি নামে গাছের সবুজে...
নিভে যাবে সব ভাঙচুর!
বাসায় পাখির বুকে কেঁপে ওঠে নতুন পালক
ভোর নামে
কিছু শিউলি পেয়ে যাবে বুকের উঠোনে,
আলোর আওয়াজে সাড়া দিলে ।
বিগত কেয়াগন্ধ ভেজে ফোঁটায় ফোঁটায়....
দহনদগ্ধ দিনে রক্তের তান্ডব
বসন্তবৌরি উড়ে যায়
প্রজাপতি ঝিলমিল ফুলের পাড়ায়!
" নতুন জীবন"!
====================================
সজ্জ্বল দত্তের কবিতা
কোমা
*******
শরীর টানটান..প্রিয় বন্ধু তাপস..কফিনের মধ্যে চেনা মমি।
দোলাও যন্ত্রমিটার সামনে ছবির সঙ্গে
ঢেউয়ের দুলুনি চালাও বুকের বাঁদিকে ।
স্পর্শে পাথরখণ্ড নাসিকায় স্থিরবায়ু ইন্দ্রিয় বরফচাপা
দু'চোখ হয়ত কালো হাতড়ে হাতড়ে অন্ধ
ঘুটঘুটে পথ ধরে সোজা ...
এই নাও শুভেচ্ছা, তাপস, ফুল থাকল মাথার কাছে।
পাপড়ির ভাঁজে ছেঁড়া টাটকা হৃৎপিণ্ড লাল
উৎসর্গে তোমারই নাম লেখা।
প্রচণ্ড সাইক্লোন হঠাৎ উন্মাদ জানলায় আছড়ে পড়ে
শুভেচ্ছা ছেঁড়াফুল উড়িয়ে ঘরভর্তি
লণ্ডভণ্ড ঝড়ে সামনের পিকচারস্ক্রিন।
ধীরে ধীরে পাল্টায় বাঃ রে চমৎকার,
একেবারে অন্য ছবি চোখের পাতায়
তোমার শরীর মিহি স্বচ্ছ পাতলা সাদা কাচ
ভুরুতে কাটা দাগ একমুখ চুলদাড়ি...স্লাইড শো...
আয়নায় দেখা মুখ...
স্পষ্ট লম্বা শুয়ে মমির ওপর ।
ঘুমোও... ঘুমোও বন্ধু, মাটি আর শূন্যের মাঝে
এইবার তবে যাই ?
ফারাক তো এটুকুই
আমি আর আমরা কি আলাদা কিছু ?
====================================
রাজদীপ ভট্টাচার্যের কবিতা
পাঁচ পাখাওলা প্রজাপতি
***********************
প্রত্যেকে অপেক্ষা করছি সেই পাঁচ পাখাওলা প্রজাপতির জন্য,
কবে সে এসে বসবে 'সংসার' এর ওই সবেধন নীলমনি ফুটকির ওপর
আর মুহূর্তে আমরা ভুলে যাব কত বছর হয়ে গেল কোনো চিঠি আসেনি খামে !
এ বছর শীত রুক্ষ বয়ে গেল অকারণ। ভুলে যাব বাবার পিঠের
কোনদিকে লাল তিল ছিল ! আমাদের পুরনো বাড়ির কলঘরের দেওয়ালে
দাদার লুকোনো দেশলাই-এর কথা। তুমি বলেছিলে একদিন সেই রেশমি রুমাল
আমাকে দেখাবে ! যার ভাঁজে ভাঁজে আজও বিগত জন্ম থেকে উঠে আসা
তিব্বতি ভেষজের ঘ্রাণ। ভুলে যাব, সব ভুলে যাব। ওই পাঁচ পাখাওলা প্রজাপতি
নেমে এলে স্মৃতি পুড়ে যায়। তবু সে কী আসে!
সব স্মৃতি বুকে নিয়ে আমরাই পুড়ে যাই আগুনে আগুনে।
====================================
====================================
অপ্রকাশিত কবিতা পাঠান
rajdipb1976@gmail.com
★★★★★★★★★★★★★★