পৃথা চট্টোপাধ্যায়'এর কবিতাগুচ্ছ
★ হরিণীর সুখ
১
নদীর সুজন বুকে রাখতেই পারো
অনন্ত উপোসী ঠোঁট। হংসিনী জল
কেটে কেটে , অবাধেই যেতে পারো
গভীরতা মেপে। তুমিও মরাল হতে পারো
ধূপছায়া জলে...
২
ভূমিকা ছিল না কোনো, ছিল না ছলনা
দেহজ সুখের ছিল জমাট পসরা
কল্লোলিত জলের ফোয়ারা।
পাতাকুড়ানিরা কবে নিয়ে গেছে
বনতলে ঝরে পড়া পাতা।
তবে কি আজকে শুধু পাতার ফসিল !
৩
উপোসী ঠোঁটের এক পুরোনো অসুখ
কদমের ফুলে মুখ রেখে খুঁজে নিতে চায়
হরিণীর সুখ, অবারিত অধিকারে।
তখনো কি দোষ দেবে দীঘল গ্রীবার ?
টেনে কি নেবে না প্রিয় সুগন্ধি শরীর ?
শব্দ মায়া জানে যারা চুপ করে থাকে
এইসব সংসার প্রতীকী সংলাপ ।
৪
কোনো কোনো সম্পর্কের মাঝে
তিরতির বয়ে যায় ফল্গু ধারা
চাঁদোয়ার ফুটোফাটা দিয়ে
আলো এসে ধুয়ে দেয় নদীর শরীর
বাতাস বিবশ হয় আহুতির ক্ষণে
৫
কায়া তরুবর পাঁচটি সে ডাল
শাখায় শাখায় দোলে অগণিত লোভ
হরিণী আপন মাংসে বৈরী হয়।
বসন্তের হাওয়া দিলে
গন্ধ শুঁকে সাপ আসে,
শিস্ দিয়ে উড়ে যায় নামহীন পাখি
শিকড় একান্তে ঢোকে মাটির গভীরে
৬
ক্রমশই নামা আর গভীরতা খোঁজা
খুঁজে যাও বালতি দড়িতে
একবার নামিও কলস
কূপের আনন্দধ্বনি পাবে
উচ্ছ্বসিত জলের আবেগে
৭
নিমফুল গন্ধ মেখে রঙিন পাখায় ,
ঝাঁকে ঝাঁকে প্রজাপতি ওড়ে বাতাসের টানে ।
৮
তির্যক ঠোঁটের কোণে অনুপ্রাস প্রেম,
কখনো ঝিলিক দ্যায় দুর্যোগের রাতে।
দুহাতে সরিয়ে রাখি জঞ্জালের স্তূপ
সব স্রোত এইখানে এসে করে থাকে চুপ।
মৌনতায় ভরা থাকে আদিম বাসনা
রাতের জবায় কোনো নিষেধ থাকে না।
৯
এই এক পুরোনো অসুখ, নষ্ট ঘুম।
কামিনী গাছের ঝোপে সাপ আসে,
ধীরে ধীরে খুলে যায় আদিম খোলস,
গলে পড়ে মাদুলির মোম।
যে রাতে পাগল হয় বাঘ রতি
সেই কথা লিখে রাখে রমণ পুরাণ।
১০
তর্জনীতে লেগে থাকে জীবন বিষাদ
ভাষাহীন তরল প্রদাহ
নির্বেদ সময় ধরে অনন্ত শাসন
মানচিত্রে মেলা থাকে দেহ
চলো ফের খেলি সেই পাখিদের খেলা
কেউ এসে ছিঁড়ে খাক হরিণীর সুখ
উপোসী ঠোঁটের সেই পুরোনো অসুখ ...
কবি পরিচিতি ~
পৃথা চট্টোপাধ্যায়'এর জন্ম মুর্শিদাবাদে। বহরমপুরে স্কুলজীবন কাটিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর। বর্তমানে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। শৈশব থেকেই মায়ের অনুপ্রেরণায় সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ এবং লেখালেখির হাতেখড়ি বিদ্যালয়ের দেওয়াল পত্রিকায়। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পত্র পত্রিকায় নিয়মিত কবিতা প্রকাশিত হয়। নিভৃত কবিতাযাপন বেশি পছন্দের । কবিতা ও মুক্তগদ্য লিখতে ভালোবাসেন। বিভিন্ন কবিতার বই ও পত্র-পত্রিকার আলোচনা করে থাকেন। তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে দেশ, কবিতা পাক্ষিক, সুখবর, ডেইলি হান্ট, দৈনিক বজ্রকন্ঠ, কবিতা আশ্রম,বারাকপুর স্টেশন, মল্লসাহিত্য, আর্ষ, শতাব্দীর কলকাতা প্রভৃতি পত্রিকায় এবং ই-ম্যাগাজিনে। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'উল্কি আঁকা নদীজল' ।
কবিতাগুলি খুব সুন্দর। মুগ্ধপাঠ
উত্তরমুছুনখুব খুশি হলাম। ধন্যবাদ ও আন্তরিক শুভেচ্ছা 🙏🌹
মুছুনসুলিখিত অনুভব তোমার শব্দমালায় পৃথা । চতুর্থটি বিশেষ করে ছুঁয়ে গেলো ।
উত্তরমুছুনপ্রাণিত হলাম আপনার মতামতে দাদা। আন্তরিক শুভেচ্ছা নেবেন। 🙏🌹
মুছুন