শনিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২১

রঞ্জনা ভট্টাচার্য্য'এর কবিতাগুচ্ছ

 রঞ্জনা ভট্টাচার্য্য'এর কবিতাগুচ্ছ





কোলাজ


রাজনৈতিক সিংহাসনে

লক্ষ্মী গণেশ বসে মাঝে মাঝে আল্লার

দিকে আড়চোখে তাকায়, 

আল্লার একাকীত্বের স্বর যীশুর ক্রুশে

গিয়ে ফিসফিস করে বলে,  হলুদ

ছোপ লাগা আঁচলে লেগে আছে বিপ্লব। ওর  আলতায়

জেগে আছে দ্রোহকাল।  এক চোখে রাধাভাব, আরেক 

চোখ ছায়াপথ।  গনগনে আঁচ ছাড়া তিনি রান্না  করেন না। 


প্রতিটি স্টেশনে ভাবি নেবে যাব, 

একটু নেশাগ্রস্ত প্রেত পিছন

পিছন যাবে, সমস্ত স্টেশনের দেওয়ালে

শ্যাওলা লেখা দেখাবে। তারপর... আনাড়ি ঈশ্বর এসে 

শ্যাওলা তুলতে তুলতে সময় ফেরত চাইবে সুদে ও আসলে। 

সংলাপ ভুলে আমি ঈশ্বরের

নাড়ি ধরে দেখব , সময় চলছে টিকটিক টিকটিক... 

দূর থেকে হুইসেল , 

ট্রেন আসছে ঝমঝম ঝমাঝম... 


 

আত্মজীবনীর ছাইগাদায় লুকিয়ে রাখবো তাকে। 

উলোটঝুলোট গোবর-মাটি দিয়ে গড়া খড়ের পুতুল 

কালকূটের সাথে দেখা করতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি । 

তার সমস্ত শরীরে জীবনানন্দের ঘ্রাণ...

করতলে পাখির বাসার চিহ্ন এঁকে

দিতে গেলে অভিশাপ দেয়, জন্ম জন্ম

ঘর বেঁধে থাকার,

তার  ফেরা হবে না জেনে জেগে থাকে

অন্ধ আয়না, পূর্ব জন্মের পথ বেয়ে নেমে আসে শ্রমণা, 

যাত্রা করে ছাইগাদার দিকে। 

কালকূটের চোখে জল, জীবনানন্দ ট্রাম দেখে 

ফেরত আসেন হিজল গাছের নিচে। 


গোধূলি রঙের চোখ দিয়ে ডাকলে 

আমি ঝরা পাতা উড়ে যাই। 

হৈমন্তী কুয়াশার পিছল আলোয়

দড়ির উপর দিয়ে হেঁটে যায় প্রেম,

উপত্যকা জুড়ে থাকে মৃত্যুর পূর্বাভাস,

জ্যোৎস্নার জঙ্গল জড়িয়ে

পাতাখসা শরীর কোল 

খোঁজে মাথা রাখবে বলে। 


চুম্বনে কেঁপে ওঠে নীহারিকা...


 ৫

মা ঠিক আমার সামনে দৌড়োচ্ছে, 

কিছুতেই  ধরতে পারছি না, 

সামনের গর্তটাকে লাফ দিয়ে পেরিয়ে

যাব ভেবেছি, তার আগেই পাশ না কাটিয়ে গর্তে পড়ে গেল মা, 

ইচ্ছে করেই, 

কেন মা? 

সব গর্ত লাফিয়ে পেরোনো যায় না, 

সব গর্ত পাশ কাটাতে নেই, 

কোনো কোনো গর্তে পড়ে গিয়ে উঠতে

শিখতে হয়...


কলসি দড়ির দিকে প্রেম চোখে তাকালো যেই, 

ভাঙ্গা ঘরের কোণ থেকে প্রতিক্রিয়াশীল আলো দড়ির খরখরে

নির্লিপ্ততা দেখালো। 

দড়িকে সাপ হয়ে যেতে দেখে কলসি বোঝে হামলাবে না কিছুতেই ...

ছলাৎ ঈর্ষা, আর ভেজা শপথ নিয়ে অপেক্ষা করছে কলসি একটা গলার। 

যাকে দেখলে দড়ির আচমকা জল তেষ্টা পাবে... 

কলসির দিকে হাত বাড়াবে। 


যার নামে কোনো মামলা নেই সেই

ছা-পোষার বড় লজ্জা! 

ভাত ফুটিয়ে খায়, গাঢ় তেতো চায়ের লিকারে গলা ভিজিয়ে 

আকাশের মেঘটাকে  দেখে, মনে হয় সুপ্রিম কোর্ট... 


ওখানে গিয়ে মামলা ঠুকে দিলে হয়... ভাবে... কার নামে... 

সেটা মনে পড়ে না, 

নোটবুক খুলে এক এক করে শত্রুর নাম লেখে... 

চাল, ডাল, তেল, আটা..

উঁহু... 

সব কেটে কুটে লেখা হয়...


মাছ-মাংস...আমিষ... আমি ইস...


৮ 

লাইট হাউজের করুণ বুনোফুল দৃষ্টি, 

অপারগ চোখে ঝড়ে উল্টানো জাহাজ দেখে, 

আলো ফেলে স্তব্ধ হয়, এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ভাবে, নাবিকেরা 

মাস্তুল ধরে ফিরে আসুক... যেমন...

হাসপাতালের করিডোরে  মুমুর্ষু  সন্তানকে রেখে পিতা

এক কোণে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। 


কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আগে

স্বপ্ন পায়, 

ঘুমের স্টেশনে নির্জীব কুয়াশায় 

হাঁটতে থাকি নরম রেল লাইনের উপর শক্ত শক্ত পা ফেলে। 

চারপাশে মোলায়েম আলোর মতো পাহাড়ের গা বেয়ে 

নেমে আসে জীবনের ভুল চুক,

প্রবাহিত জলের স্থিতিস্থাপকতায়

লেখা হয় যাওয়া-আসা। আগুন আগুন

দুঃখ বেদনার কাদামাটি মেখে কান্নার গায়ে সব লেপেপুছে আসে। 

স্বপ্নের সাদাকালো রঙ রুকস্যাকে লিখে রাখে... বর্ণান্ধতা অভিশাপ।




বিপ্লবী ঈশ্বর


ঈশ্বর লন্ঠন হাতে, 

কালোর মধ্যে

নিহত

রঙকে প্রাণ দেবেন

বিপ্লবী ঈশ্বর, 

একহাতে আলো আরেক হাতে

তুলি, 

আঁধারের মৃত্যুর কথা দেয়ালে

লেখা আছে, 

লেখা আছে রঙের জন্মের কথা

কালোর ভিতর, 

শয়তানের ছায়া বিপরীতে অন্ধকার

ঘনক হাতে হেঁটে দাঁড়ায়, 

ঈশ্বর ও শয়তান মুখোমুখি, 

একজন আছে তাই আরেকজন

মুখ মোছে,

দুজনেই দুপথ দিয়ে হেঁটে মানুষের

শিয়রে এসে দাঁড়ায়। 

সময় প্রসারিত হয়, সময় সঙ্কুচিত ...




কবি পরিচিতি ~


রঞ্জনা ভট্টাচার্য্য পেশায় শিক্ষিকা। প্রথম কাব্যগ্রন্থ 

'আঁধারের বাউলগান'। গান শোনা আর বই পড়া নেশা। 

1 টি মন্তব্য:

শেষ পর্ব - অনন্ত অনন্তকাল ভেসে যেতে যেতে

"অনন্ত অনন্তকাল ভেসে যেতে যেতে" সজ্জ্বল দত্ত  ৭ .          " And miles to go before I sleep            And miles to go before...