শনিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২১

কবি বিপ্রতীপ দে 'র কবিতাগুচ্ছ

 কবি বিপ্রতীপ দে 'র কবিতাগুচ্ছ





আবহাওয়া ।।


তুমি   আর ডাকো না আমায়

জানি  কী যেন সংকোচে

ভুলে  মন দিয়েছ বলেই

প্রেমের  বদনাম কি ঘোচে!


পথে   দাঁড়াই  ঝড়ে জলে

তুমি  আসতে পারো পরি!

আমি  একশো হাজার বার

যেন  ভালোবেসেই মরি!


 তুমি  ফিনফিনে এক মেয়ে

 চোখ  দিঘল টানা টানা,

 খুব  পেয়েও কাছাকাছি

 হল  অর্ধেকটাই জানা!


বলো  তেমন করে ভাবো

ঝড়  আমার সে পাগলামো!

ঠিক  আবার দেখা হবে

যদি  অশ্রু হয়ে নামো!


তোমায়।।


     ফুল ভেবেছি তোমায়

     ভুল ভাবিনি তা তো,

     কান্না দেব তোমায় 

     সযত্নে হাত পাতো!


          ভেবেছিলাম পাতা

          বৃষ্টিজলের ফোঁটা,

          তুমি অনেক অনেক কিছু 

           প্রথম সূর্য ওঠা!


      গান ভেবেছি তোমায় 

      চেনা মেঘলা দিনে,

       নীল সাদা মেঘ তুমি

       দেখেছি আশ্বিনে!


              ভেবেছিলাম পাখি 

              অথবা তার নীড়ও,

              আমার দিকে ওই জন্মে

              আরেকটি বার ফিরো!


         ভেবেছিলাম তুমি 

         আলো অন্ধকারও,

         আজকে তুমি দিগন্ত 

         কাল আকাশ হতে পারো!



বিস্মরণের গান ||


     আমাকে ভুলে গেছ?

     দুচোখে কাঁপে জল!

     ভেতরে ঝুঁকে দেখি

     বিরহ সম্বল !


    কিরণ ঝিকিমিকি

    কুয়োর অতলে!

    কোথাও পৌঁছব

    অশ্রু পথ হলে!


    সে-পথে যেতে চাই

    জেনেছে পাখিও,

    বলেছে গোধূলির

    দিকেই তাকিয়ো!


    ভুলেও ভুলে গিয়ে

    রেখেছ স্মরণে,

    এখনও ব্যথা চাই

    নতুন ধরনের!




শিউলি লেখায় ||


এই নীলাকাশ ভীষণ চেনা

যেমন আমি তোমায় চিনি


ভিজে পাতায় তোমারই নাম

 অন্য  কারো নাম লিখিনি?


এই নীলাকাশ মন কেমনের

মেঘলা এখন আংশিকই তো,


দূর দিগন্ত সাজিয়ে দিলে

কখন কবে আমার ভিতর!


এই নীলাকাশ সাদামেঘের

দল বেঁধেছে পেঁজাতুলো,


খুব পুরোনো চিঠির জানি

আত্মীয় হয় মলিন ধুলো!


এই নীলাকাশ কাশফুলেরা

তোমার মতোই চেনে আমায়!


বুঝতে পারো  কান্না কেন

তোমার দিকে গড়িয়ে যায়!


এই নীলাকাশ দেখছ তুমি

একলা একা জানলা খুলে,


পথের ক্ষতও শুশ্রূষা চায়

আজও ঝরা শিউলি ফুলের!




ওষ্ঠবর্ণ ||


ঠোঁটের ওপর ঠোঁট রাখাটা শেখায় বিহঙ্গেরা,

বললে প্রথম চুমুর থেকেও শেষ চুমুটি সেরা!




বিসর্জনের পরে ||


  কোথাও কিছু পড়ে থাকল নদী,

  বুকের পাড়ে ঢেউচিহ্ন লেগে!

  বোধন থেকে আজকে বিসর্জনে

  অনুরাগের সিঁদুর ওঠে জেগে!


  চেনা বাতাস হেমন্ত নিঃশ্বাসে,

  আকাশ নীল,তাকায় ঝরা কাশও;

  বিসর্জনের ব্যথার মতো তুমি

  এখনও কি আমায় ভালোবাসো?


  জীর্ণ ভাঙা ঘাট ছুঁয়েছে জল,

  সেই প্রথমের স্পর্শটুকু রেখে!

  কেউ জানে না এই নবমী নিশি

  চোখের জলে তোমার কথা লেখে!


  কোথাও কিছু পড়ে থাকল নদী,

  বেলপাতা ফুল চাঁদমালা ও খড়!

  তোমার মুখ মনে পড়ছে কেন

   শেষ প্রতিমা বিসর্জনের পর?




দিগন্তরেখা তোমাকেই ||


আমাকে এখন মনে রাখবে না জানি,

বাগানে ছিলাম বৃষ্টির পাখি দুজনে!

ঠান্ডা লাগবে,সাবধানে ফিরো,চোখে জল;

মেঘের মতন এমন অতীত আমাদের।


শিশুরও তুচ্ছ ঘুমের ভেতর কান্নায়,

ভালোবাসা মানে নিভু নিভু আলো,লন্ঠন!

ঝোপঝাড় দিয়ে ঢেকে রাখা ওগো কাহিনি,

তোমার স্টেশনে রেখে আসা এক সন্ধে!

আলোগুলি ভিজে চুইয়ে নেমেছে বিদায়ে,


বলেছিলে,আর করবে না দেখা কথা দাও।

কত কতদিন নিজের কষ্টে মনোরম,

দলবেঁধে এসে পাখিরা আমাকে বোঝালো!

কিছুই করার ছিল না কেমন অসহায়,

ভাবতে পেরেছি দিগন্তরেখা তোমাকেই!


এখনও কেমন অপরিসীমায় ছড়ানো

চেনা কষ্টের হেমন্ত এত কুয়াশা!




রক্তরেখায় ।।


           তুই মানে পাখি

           তুই মানে ভিজে ফুল,

           রোগা নদী যেন

           গালের দুপাশে চুল!


            তুই মানে মেঘ

            মেঘেদের জলকণা,

            ভালোবাসলেও

            কাছাকাছি থাকবো না,


            কেন বলেছিলি,

            আমাকে বুঝিয়ে বল?

            তুই মানে চোখে 

            আবার কাঁপছে জল!


           তুই মানে কোনো

           রক্তপাতের ফোঁটা,

           মনের ক্ষতয়

           চেনা ভিজে গল্পটা!


            তুই মানে কোনো

            সুগন্ধ অনুভূতি,

            দুঠোঁটে  চোখের পাতা ও

            কপাল ছুঁতি!


             তুই মানে কী কী

             বোঝাতে পারি না তোকে,

             গোধূলির আলো ছোঁয়

             ভাঙা নৌকোকে!



পদাবলী ।।


                আমি আর তুই

                 এ ওকে ছুঁই        

                           শরীর এবং মন,


                 ভিজে সৈকতে

                 নখ দিয়ে ক্ষতে

                            এ কথা লিখেছি

                                         কখন?



দশমী ||


এসেও ফিরে গেলে,

কান্না থেকে আবার তুমি নতুন কিছু পেলে ।





কবি পরিচিতি ~

কবি বিপ্রতীপ দে। জন্ম ১৫ আগস্ট, ১৯৬২। হাওড়া জেলায়। 

বেড়ে ওঠা সোদপুর-নাটাগড়ের কলোনি জীবনে। প্রথাগত 

শিক্ষা এড়িয়ে স্ব-শিক্ষিত হওয়াতেই সচেষ্ট থেকেছেন। কবিতায় 

আত্মপ্রকাশ আশির দশকের শেষপ্রান্তে। নাট্যকার হিসেবেও 

পরিচিতি পেয়েছেন। 


পিতৃভূমি বাংলাদেশের প্রতি আজীবনের টান। বিচিত্র পেশায় 

দিনগুজরানোর পরে বর্তমানে সাংবাদিকতা ও সম্পাদনায় 

স্থিতধী। দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ করে চলেছেন একটি পাক্ষিক 

সংবাদপত্র। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ভিজে স্টেশন, ইচ্ছে করছে বলে,  

রেডবুক দারুণ পশ্চিম, পিপীলিকাদের ব্যথা, 

লাইমীর উপকথাগুলি এবং  শ্রেষ্ঠ কবিতা। 

1 টি মন্তব্য:

শেষ পর্ব - অনন্ত অনন্তকাল ভেসে যেতে যেতে

"অনন্ত অনন্তকাল ভেসে যেতে যেতে" সজ্জ্বল দত্ত  ৭ .          " And miles to go before I sleep            And miles to go before...