"অনন্ত অনন্তকাল ভেসে যেতে যেতে"
সজ্জ্বল দত্ত
৪.
ছন্দ-ভাষা-আঙ্গিক
একজন প্রকৃত কবি কখনো একভাবে একটা আঙ্গিক অনুসরণ করে একই ভাষায় সারাজীবন লিখতে পারেন না । ছন্দে , ছন্দভাঙায় , চোরাগদ্যে, টানাগদ্যে , গ্রাম্য শব্দপ্রয়োগে , অতিআধুনিক শহুরে শব্দপ্রয়োগে , যখন যেভাবে কবিতা আসে সেভাবেই লেখা হয়ে যায় । তবে অন্ততঃ ছন্দের ক্ষেত্রে বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠতে পারে এইখানে যে , তার কবিতায় যেখানে ছন্দের স্বাভাবিক দোলাচল , সেই স্বাভাবিকতাকে তিনি সচেতনভাবে সেখানে পরিহার করছেন কিনা । করে থাকলে , কেন ?
" জৈব-রসায়নে ক্রোমো/জম কোষ কলা ৮+৬
নির্মিত হয়েছে যার /প্রতিক্রিয়া হেতু ৮+৬
বস্তু প্রাণে রূপায়িত /হয় , রূপায়িত ৮+৬
হয় প্রাণচেতনায় /চেতনা বিন্দুটি ৮+৬
ধ্যানে রূপায়িত হতে /পারে , ধ্যানলোক ৮+৬
ভেদ করে সূক্ষ্ম বোধ-/লোক গড়ে ওঠে ৮+৬
( উৎসবীজ )
যেভাবে পর্ব ভাগ করা হল , সেইভাবে পড়লে অক্ষরবৃত্তের এর চেয়ে ভালো উদাহরণ আর কি হতে পারে ? কিন্তু সমস্যা হচ্ছে , এইভাবে তো কবিতা পড়া হয় না । ক্রোমোজম শব্দের মাঝখানে দুই পর্বের ভেদরেখা অর্থাৎ নিঃশ্বাসের বিরাম - এটা কবিতা পড়ার সময় মেনে নেওয়া কার্যত অসম্ভব । পাঠক কবিতা পড়তে গিয়ে বিশ্রাম নেবেন যতিচিহ্ন অনুযায়ী , যতিচিহ্নের ব্যবহারও হয় ঠিক সেই কারণেই । কবি চাইলে এক্ষেত্রে সেই অনুযায়ী লাইনগুলি লিখতেই পারতেন । সেক্ষেত্রে হত -
"জৈবরসায়নে ক্রোমোজম কোষকলা
নির্মিত হয়েছে ,
যার প্রতিক্রিয়া হেতু বস্তু প্রাণে রূপায়িত হয় ,
রূপায়িত হয় প্রাণচেতনায় ,
চেতনাবিন্দুটি ধ্যানে রূপায়িত হতে পারে ,
ধ্যানলোক ভেদ করে সূক্ষ্ম বোধলোক গড়ে ওঠে"।
এইবার একেবারে পরিস্কার গদ্যকবিতা । পাঠক পড়বেনও এইভাবে । কিন্তু কবি নিশ্চয়ই এক্ষেত্রে ছন্দের ধারণা স্বেচ্ছায় দিতে চেয়েছেন , সেই কারণেই এই ফর্মে লিখেছেন । সুতরাং সচেতনভাবে ছন্দ পরিহার করেননি কবি দেবদাস , বরং যেখানে হয়ত গদ্যে লিখলেও হত , সেখানে ছন্দ রাখতেই চেয়েছেন ।
আবার ৮ + ১০ ফর্মের অক্ষরবৃত্ত :
" আকাশের নীচে ম্লান / জনপদ ঘুমায় এখন
পৃথিবীর ঘূর্ণনের / আদিশব্দ শোনা যায় শুধু
অথৈ রাতের কালো / আলো হয়ে ভাসায় প্রান্তর
সিদ্ধাচার্য মগ্ন হন / গূঢ়-লোকে মানস-ভ্রমণে " ।
( ' অখণ্ডধ্বনি ' : আচার্যর ভদ্রাসন )
এখন কথা হচ্ছে , এই যে ৮+৬ , ৮+১০ ইত্যাদি দেখা হল , অক্ষরবৃত্তে মাত্রানির্ধারক অক্ষর বড় , না ধ্বনি বড় ? অধিক আলোচনার অবকাশ নেই , একটি উদাহরণে দেখা যাক বিদগ্ধজনে কী বলেন! " কবিতার ক্লাস "এ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী : " অক্ষরের চাইতে ধ্বনি বড় । অক্ষর তো আর কিছুই নয় ধ্বনিরই একটা দৃশ্যরূপ মাত্র । আসলে যা ধর্তব্য , তা হচ্ছে ধ্বনি । তাই চোখের নয় , কানের রায়ই শিরোধার্য " । ... কিন্তু মিলন যেখানে রীতিসিদ্ধ নয় , শ্রবণ কি সেখানে অসবর্ণ বিবাহে অনুমতি দেয় ? দেবদাস আচার্যর কবিতায় - দেয় । দেবদাসের ছন্দ-ছন্দভাঙায়-ছন্দের পরীক্ষায় চোখ ও কানের মিলন এতই স্বাভাবিক এবং মুন্সিয়ানার সঙ্গে যে পড়তে গিয়ে একচুলও কোথাও আটকায় না ।
" এই তার / স্থিতি প্রতি/ভাস
দুপাশের / এ কঠিন / মায়ামুখ / ঘাস
আলো করে /
তার রক্ত / ঝরে
.
.
.
কার মুখ /মনে পড়ে ?/ভেসে আসে /
কার ক্লান্ত / গীত ?
মানুষের /জন্যে থাকে /পাপবিদ্ধ /শীত
মানুষের /জন্যে থাকে /শীত "
( মৃৎশকট ৭৭ নং শ্লোক )
বৈশিষ্ট্য : কবিতাটির শুরুতে প্রতি লাইনে একটা করে চারমাত্রার পর্ব বাড়ছে , শেষে গিয়ে প্রতি লাইনে একটা করে চারমাত্রার পর্ব কমছে । নিঃসন্দেহে ছন্দের একটা ভাল পরীক্ষা ।
তবে দেবদাস কখনোই ছন্দকে তার কবিতার প্রধান উপজীব্য বিষয় করে তোলেননি । সেই কারণে ছন্দে লেখা কবিতাতেও তার পর্বসমতা আদর্শের অনেক ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম । সেই ব্যতিক্রমের দৃষ্টান্তগুলো খুঁটিয়ে বিচার করলে মনে হয় কোথাও সেগুলো স্বাভাবিকভাবে হয়ে গ্যাছে , আবার কোথাও বা অনবধানতাপ্রসূত । সপাটে ছন্দে শুরু করলেও কোথাও হঠাৎ একমাত্রা পড়ে গেল , বা একমাত্রা বেশি এসে ছন্দপতন ঘটাল , এমন বহুক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ।
থাক সে প্রসঙ্গ । গদ্যকবিতার আলোচনায় আসা যাক । গদ্যকবিতায় চোরাছন্দের ক্ষেত্রে আধুনিক বাংলা কবিতায় সবচেয়ে বেশি মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন সম্ভবতঃ অরুণ মিত্র । তবে দেবদাসের গদ্যকবিতার চোরাছন্দ মোটেই অরুণ মিত্র প্রভাবিত নয় । অরুণ মিত্রের চোরাছন্দের প্রয়োগ এমনই যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গদ্যে যেন পদ্যের আভাস তৈরি করে । আর দেবদাসের চোরাছন্দ এমন যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পদ্যে যেন গদ্যাভাস তৈরি করে । তবে নির্দ্বিধায় বলে নেওয়া ভালো , অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে শুধু চোরাছন্দের দিকটা ধরলে এ বিষয়ে অরুণ মিত্রের কৃতিত্ব দেবদাসের থেকে অনেক বেশি , আর দেবদাসের বিশেষ কৃতিত্ব হল আবেগ সংযত , স্পন্দন স্তিমিত , ফলে গদ্যাত্মক বাকপর্বের ব্যবহার অধিকতর ।
"এইসব অস্থায়ী রেখার
কোনো আদি নেই বা অন্ত নেই
আদি ও অন্তহীন এই রেখা-সকলের
কোন শূন্যতাও নেই বিরামও নেই
শেষ হওয়ার আগেই শুরু হয়ে যায়
শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায় " ।
( সুভাষিতম )
' নেই ' জনিত এবং ' শুরু হয়ে যায় ' , ' শেষ হয়ে যায় ' জনিত এতগুলি গদ্যাত্মক বাকপর্ব কী চমৎকার গদ্যকবিতাভাস তৈরি করেছে ! আদতে গদ্যকবিতার প্রাণ হল কবিতার সম্পূর্ণ শিল্পব্যঞ্জনা সঙ্গে নিয়ে লেখার ধরনে গদ্যভিত্তিকতা । মৃৎশকট ও মানুষের মূর্তির অধিকাংশ কবিতাই এই ধরনের । তবে দেবদাস আচার্যর সবচেয়ে বড় পারদর্শিতা ভাবপর্ব সৃষ্টির ক্ষেত্রে । একটা বা দুটো পর্ব অকারণ এনে ফেলেন কিন্তু তা বোঝায় অনেক ।
" একটা বড় বোধ ও হৃদয়ের দিকেই ছুটে চলেছে
মানুষের মেধা --
লম্বা -- যতি-চিহ্ন-হীন "
( নিজের মতোই দেখেছি : ঠুঁটো জগন্নাথ )
ঠিক এইরকম 'লম্বা' এবং 'যতিচিহ্নহীন' এর মত ভাবপর্বর উদাহরণ দেবদাস-কবিতায় অজস্র দেখা যায়।
রবীন্দ্রনাথ লিপিকা , বলাকা , পুনশ্চ এই সমস্ত কাব্যগ্রন্থে মুক্তছন্দের ধারণায় যে ধরনের গদ্যকবিতা লেখার ধারা শুরু করেছিলেন , বহু সমালোচকের মতে তা আজকের আধুনিকতম গদ্যকবিতার ধাঁচের প্রথম ধাপ । রবীন্দ্রকবিতার দ্বারা কোনরকম প্রভাবিত না হয়েও দেবদাস আচার্য রাবীন্দ্রিক মুক্তছন্দের ধারণায় দীর্ঘকবিতা লিখেছেন । উদাহরণ : ঠুঁটো জগন্নাথ এর ' ১৯৮২ ' পর্যায়ের কবিতা ' নিজের সঙ্গে কথা ' , কিংবা অগ্রন্থিত ' কারখানার কবিতা ' ।
দেবদাস ছন্দে , গদ্যে দুইধরনের কবিতাই প্রচুর লিখেছেন - এই হল সারকথা । বেশ কিছু সনেটেরও সন্ধান পাওয়া যায় অনুসূচিত কবিতায় , অগ্রন্থিতও দু'একটি রয়েছে । সনেটেও যথারীতি তিনি বিশৃঙ্খল । তার সনেট পেত্রার্কীয় না শেক্সপীরিয়ান এ ব্যাপারে গবেষণা করা অর্থহীন । ৪+৪+৪+২ এবং ৮+৬ দু'ধরনের সনেটই তিনি লিখেছেন । কিন্তু মিলের কোন নির্দিষ্ট নিয়ম কোনটাতেই নেই । পেত্রার্কীয় সনেটের মিল ( কখখক কখখক চছজ চছজ ) কিংবা শেক্সপীরিয়ান সনেটের মিল ( কখকখ গঘগঘ পফপফ চচ ) তার একটা সনেটেও পাওয়া যায় না। " পেখেরা " কবিতায় ক এর সঙ্গে গ এর মিল আবার চচ মিল , " মাদারি " কবিতায় ক এর সঙ্গে গ এর মিল এবং এক্ষেত্রে চচ মিলও নেই । বরং বলা ভালো চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকের কিছু কবির মত মিলহীন সনেটই লিখেছেন তিনি । তবে একথা অনায়াসে বলে দেওয়া যায় বুদ্ধদেব বসু বা বিষ্ণু দে র মত সনেটের মেজর কবি দেবদাস কোনদিনই নন । দেবদাসের ছন্দের প্রাণ অন্য জায়গায় যা আগেই আলোচনা করা হয়েছে ।
# # #
কবিতা নির্মাণে ছন্দ ছাড়া অন্য যে বিষয়ের প্রধান ভূমিকা থাকে তা হল ভাষা ও আঙ্গিক । বহু বহু কবির ভীড়ে একজন কবিকে আলাদা করে নেওয়া যায় তার কাব্যভাষা দিয়ে । বাংলাভাষায় মাইকেল মধুসূদন , রবীন্দ্রনাথ , জীবনানন্দর মত সময় অতিক্রম করে যাওয়া কবিরা সবাই একেকটি নতুন কাব্যভাষা নতুন কাব্যআঙ্গিকের জন্ম দিয়েছেন আর পরবর্তীতে এই ভাষা ও আঙ্গিকগুলি ঘিরে লালিতপালিত হয়েছেন অসংখ্য অজস্র কবি ।
এখন প্রশ্ন হল নতুন কাব্যভাষা ব্যাপারটা ঠিক কী যা একজন কবিকে অন্যদের থেকে আলাদা করতে পারে । এই বিষয়টি ভালো করে বোঝার প্রয়োজন । কাব্যভাষা তৈরি হয় একইসঙ্গে শব্দ এবং তার অর্থের পৃথক পৃথক অথচ সম্মিলিত প্রয়োগের ওপর । এই দুটো বিষয়ের কোন নতুন রকমের একত্রিত প্রয়োগের সৌকর্ষ ও সৌষ্ঠব থাকলে কাব্যিক শিল্পজনিত ভাবসৌন্দর্য্যে পাঠকের কাছ থেকে তা সহজেই আলাদা একটা ভালোবাসা আদায় করে নিতে পারে , যা এর আগে ওই ভঙ্গীতে প্রয়োগ করে আর কেউ দিতে পারেননি কবিতায় । ... কঠিন , ভীষণ কঠিন ! সেই কারণেই প্রচুর মানুষ কবিতা লিখলেও শেষঅবধি 'সকলেই কবি নয় , কেউ কেউ কবি ' ।
দেবদাস আচার্যর কাব্যভাষার প্রাণ হচ্ছে একেবারে মাটির সঙ্গে মিশে থাকা মানুষের ভাষা যা আদৌ কবিতার ভাষা হতে পারে কিনা এ নিয়েই অত্যন্ত রক্ষণশীল পাঠক তর্ক করতে পারেন ।
১ . " চোদ্দপুরুষের চোতবোশেখের এই ফাঁকা মাঠ আমাদের "
২ . " গভভ থেকে বেশ কটা খালাস করেছি পরপর
একটা কুকুরে খেল , দুটো মোলো ওলাওঠা রোগে "
৩ . " এক চালান পাঠাবার পর নাচব ধেনো খেয়ে
৪ . " বাড়ির উঠোনে তার বউ ঘুঁটে দেয়
ছেঁড়া ইজের পরে তার বাচ্চাকাচ্চা তোবড়ানো বাটিতে মুড়ি খায়"।
ভাষার বিস্ফোরণ ! নয় কি ? ভাষা এমন বিষয় যে সেই ভাষার সঙ্গে প্রাণগত যোগ না থাকলে কবিতায় তার প্রয়োগের ক্ষেত্রকে অনুধাবন করতে একটু অস্বস্তি হতে পারে । এই অস্বস্তিকে স্বস্তিতে পরিণত করে দেয় কাব্যভাষার প্রয়োগজনিত আঙ্গিক । দুইয়ের সম্পর্ক তাই অবিচ্ছেদ্য ।
জীবনানন্দ থেকে শুরু করে চল্লিশের দশকের সুভাষ নীরেন্দ্রনাথদের ছন্দ আশ্রিত নগরসভ্যতাকেন্দ্রিক প্রতিবাদের কবিতা , রোম্যান্টিক কবিতা.... তারও পরে পঞ্চাশের দশকে সুনীল শক্তি শঙ্খ শামসুরদেরও সেই একই নগরকেন্দ্রিক রোম্যান্টিক কবিতা ( তফাৎ হল পঞ্চাশের দশকে রোম্যান্টিক কবিতায় আবেগ ও যৌনতা দুইয়েরই তীব্রতা অনেক বেশি ) পড়ে পাঠক মুগ্ধ হয়েছেন ঠিকই , কিন্তু শুধুমাত্র মুগ্ধতাই কবিতাকে স্থায়ী করে যেতে পারে না , যতক্ষণ না পাঠক সেখান থেকে নতুন কাব্যভাষা ও আঙ্গিকের সন্ধান পান , এবং তার প্রয়োগের ক্ষেত্রকে স্বস্তি দিয়ে অনুধাবন করতে পারেন ।
কবি দেবদাস কবিতা লিখতে এসেছেন ছয়ের দশকের শেষপ্রান্তে , এবং এসেই পূর্বাপর সমস্ত প্রথাগত ভাষানুসন্ধানের বাইরে একটা অন্য আঙ্গিক অন্য ভাষার সন্ধান দিয়েছেন যা তার কবিতানির্মাণে চমকপ্রদ ভূমিকা নিয়েছেন । আভিধানিক শব্দের বাইরে গ্রামের মানুষের নিজস্ব কথ্যভাষা দেবদাসের কবিতায় এসেছে এই সমস্ত মানুষের প্রতি তার একান্ত মমত্ববোধের সাক্ষ্য হিসেবে । আর যে আঙ্গিকে তিনি তা ব্যক্ত করেছেন তাতে এই ভাষা আর আঙ্গিক মিলেই তৈরি করে দিয়েছে তার কবিতার দর্শন । .... সুতরাং দেবদাস আচার্যর কাব্যভাষা আঙ্গিক একান্তভাবেই তার নিজস্ব , যা কোনদিন পাঠকের বিদ্যামনস্কতা দাবী করে না , কিন্তু তবু তার মুখোমুখি হয়ে সব পাঠককেই সামান্য থমকে দাঁড়াতে হয় । আধুনিকতম কবিরা সামাজিক বিবর্তনের ফলে উদ্ভূত শব্দকে কবিতায় ব্যবহার করতে সদাসচেষ্ট ঠিকই , কিন্তু সেই ব্যবহারেও শব্দের শুদ্ধীকৃত রূপই লেখা হয় । অন্যদিকে দেবদাস সপাটে ব্যবহার করেন একেবারে স্বাভাবিক শব্দ ফলতঃ তার কবিতারূপী কথন হয়ে ওঠে অনেক বেশি জীবন্ত ।
" তারপর সে হেউউ শব্দ করে
লম্বা একটা ঢেঁকুর তোলে " ( শুভেচ্ছাপত্র )
কিংবা
" কিন্তু সে এবার
গ্রিলে বসেই শব্দ করল
: কুউ
কুউউ
কুউউউ "( শব্দ-ভূত : বিন্দু নয় রেখা নয় )
এই ' হেউউ ' এবং ' কুউ কুউউ কুউউউ ' জাতীয় শব্দ দেবদাস আচার্য এতটাই সঠিক নৈপুণ্যে প্রয়োগ করেন , যে তা যেকোন সময়ে তার কবিতাকে সাধারণের মোড়কে অসাধারণ পর্যায়ে তুলে নিয়ে যেতে পারে অতি অনায়াসে । এই ভাষার সঙ্গে পাঠকের কবিতায় নিবিড় পরিচয় না থাকায় কমবেশি একটা বিড়ম্বনার সম্ভাবনা থেকেই যায়, কিন্তু পাঠক সেই বিড়ম্বনা আরাম করে কাটিয়ে উঠতে পারে স্বতঃস্ফূর্ত এক নিজস্ব কাব্যময় আঙ্গিকে সেই ভাষা প্রযুক্ত হওয়ায় । আর আঙ্গিকের এই নিজস্ব প্রয়োগই কবির এ' হেন স্বতঃস্ফূর্ত ভাষা থেকে কবিতাকে পাল্টে পাঠকের কাছে নিয়ে আসে পাঠকের ভাষায় তার নিজের মত করে ।
( চলবে )
পড়ে চলেছি। কত অজানাকে জানছি! অনিন্দিতা মন্ডল
উত্তরমুছুন