কবি নিলয় নন্দীর কবিতা
ভাষাসমগ্র
নিলয় নন্দী
১
এইসব মল ক্যাফেটেরিয়া ছেড়ে আলপথে নেমে পড়ি। দুদিকে কড়াইশুঁটির ক্ষেত। ঝুরোমাটি মেখে থাকা ব্যঞ্জনস্বর। ওষ্ঠে রাখি 'ও', তালুতে 'শ'। তুমি 'ওই' বলে ডাকো। বা গভীর তাকালে 'ইশ'। কি অবলীলায় সম্বোধন জুড়ে নাও। নাম ধরে ডাকতেই পারো। এখন ডাকতে নেই বলে আঁচল বিছিয়ে দিলে দিগন্ত জুড়ে। চোখে সরষেফুল দেখি। হৃদয়ে বর্ণপরিচয়। ভালবাসার উঠোনজুড়ে এখনো কেবল খাগের কলম কালির দোয়াত।
২
এসো ফেব্রুয়ারি। মাঘ বলে চিনিনি কখনো। আমার ফেসবুক পেজ এখনো হ্যাকড হয়ে আছে। রাতবিরেতে ইনবক্সে চুমু ছুঁড়ে দিলে আমি বলি, যাবে শহীদ স্মরণে? বোকা বোকা হাসি বা বাংলা খিস্তি শুনে ঘুমিয়েও পড়ি। স্বপ্নে সাজাই ফুল বাহারি পলাশ। সেইসব লাল পাড় মেয়ে দলবেঁধে আসে ফেসবুকে। উইকিপিডিয়া খোঁজে রক্তছাপ প্রোফাইল ছবি। হাইহ্যালো ভেসে এলে আমিও নিরুপায় পাতা উল্টাই বাংলা কবিতার...
৩
আমাদের ঘষামাজা শেষ। মুছে দিই বাড়তি রফলা, যফলা, রেফ। এখন অভিধান লেখে লাঙলের ফলা। নির্বাচনী বীজ। জোয়ারের রুটি আর স্লেট পেন্সিল, খিদে পেলে অমনিই খাই। পতাকা বদল হলে বদলে যায় পাঠ্যক্রম। সেইসব শিশু পাঠশালা ধুলোমাটি বেঞ্চ তেষ্টাচিত্র এখন দিবস খোঁজে, ভাষার নোঙর। আমি চিরকেলে বোবা, ভাষাটাও ভাসাভাসা বুঝি।
বাদামী বাকল চেঁছে অক্ষরে সার দিই আপাদমস্তক
৪
কাঁটাতার পেরোলে বদলে যায় নদীর নাম। বদলে যায় উত্তরপুরুষ। অছিমুদ্দি মিঞার পাঠশালায় পড়ে না বর্ণমালা। আসে জগাইমাধাই। বিলিতি রাংতা দিশি কলাপাতা, স্থিরতা গুঁড়িয়ে যায়। সরলতম জীবন হেঁটে যায় অক্ষরের বিপরীতে। তোমাকে নিয়ে উড়ে যাচ্ছি নেইপাখি। তোমাকে নিয়ে পুড়ে যাচ্ছি ভাষাসমগ্র। আঁচলে আশীর্বাদি ধান, মা ডাকেন... পায়রা উড়ে এসে খুঁটে খায় অ আ ক খ। ফেরে কথাকলি ঝুরিবট, ফেরে বেনটেন শ্লেট পেনসিল। শহরের স্কুল থেকে বর্ণমালা ফেরেনি এখনো...
পুনর্জন্ম পেলে সেও বুঝি ফিরে পাবে একুশের দেশ
ভালোবাসা বারাকপুর স্টেশন
উত্তরমুছুনখুব ভালো লাগলো ভাষাসমগ্র।প্রতিটি লেখাই বড়ো মায়াময়। চারটি কবিতায় ধারাবাহিকভাবে দর্শনের যে বাঁক পরিবর্তন হয়েছে,খুবই প্রশংসনীয়। শুভেচ্ছা। অবশ্যই ধন্যবাদ ব্যারাকপুর স্টেশন পত্রিকা।
উত্তরমুছুন