গৌতম বাড়ই এর কবিতা
★ এখনও বেঁচে আছি তোমার ঠোঁটের শব্দে
ভাসমান ঠিক আধখানা চাঁদ নেমে আসে
বালিকাটির মতন স্বচ্ছ নদীর জলে
রাত গভীর হলে চাঁদ আর তার প্রতিবিম্ব
কোলাকুলি করে খোলা আকাশের নিচে
এই নদীটির জলে।
পর্বত হতে চেয়েছিল শূন্য বুকে
আঁধার রাতে উড়ছিল যক্ষের মতন মেঘ
বালাম নৌকোর সারি ঘাটে- ঘাটে
মা যে শূন্যতা এঁকেছিল বুকে নীলনভে উড়ে
মাতৃভাষায় সে শূন্যস্থান পূরণ করছিলাম
মনে পড়ছিল
হাসতে হাসতে জননী একদিন বলেছিল-
তোর ঠোঁটে যে যাদুকথা দিলাম
একদিন সেই শব্দ নিয়ে তুই বেঁচে থাকবি
আমার মায়ের মুখের ভাষা
যা নিয়ে অবিকল ঝড় বৃষ্টিতে এখনও বেঁচে আছি।
★ মনে ঠাঁই একুশের দিবসে
আমাদের সেই শস্য-শ্যামলা গোয়াল ধানের গাঁ
আমাদের সেই বাঁকা নদীটি পিদিম চাঁদের পাড়ে
আমাদের সেই বুকের কথা মায়ের ভাষাই জানত
ধর্ম ছিল না জাত ছিল না মানসকুটিরে লালন
যাপনে স্বপনে মরণেও তাই ভাষায় প্রতিপালন
তুমি রক্তিম সূর্য এঁকেছিলে
আমি রক্তিম জনপদে মাতৃবন্দনা করছিলাম শব্দে
বেয়নেটের এক-একটি খোঁচা মুক্তির গান গাইছিল
রাইফেলের আহত গুলি দেশ গড়ছিল ভাষায়
ঠোঁট নাড়তে চেয়েছিলাম
কন্ঠ উচ্চনাদে প্রতিরোধ চায়
ফ্যাকাশে আলোর চরাচরে এক উজ্জল রশ্মি
কথার বর্ণমালায় শব্দে- শব্দে
বিদীর্ণ করছিল ও-ধারের ভূ-খণ্ড
প্রিয়তমা তোমার উন্মুক্ত করতলে
আজ একশো একটা বাংলাচুমু
তোমার আলোকিত মুখে যে ভাষা উপচে পড়ছে
তা মুঠোয় ভরে বুকের দেরাজে নিলাম
কন্ঠে উগড়ে দেব
★ তরল তিমিরের পরে
তুমি বলেছিলে উৎসব হবে বড়,
আমি বলেছিলাম কবিতা হোক।
কোথায় কবিতা আর কোথায় উৎসব!
এভাবে মেলালে একটি নির্ভেজাল ছিদ্র
অন্ধকার ডেকে আনে,
কবিও আকন্ঠ মদ্যপানের পর
খিস্তি- খেউড় গাইতে থাকে,
তারপর দূর্দান্ত এক উৎসবের সূচনা হয়।
কবির গায়ে এখন ভুরভুরে
ক্ষমা নয় ক্ষমতার এসেন্স মাখা
হাতে নোটবন্দীর নোটেপাখি
চীৎকার করে বলছে--
উৎসব হবে। কবিতা নয়। ডিহি ভুবনডাঙ্গায়
পলাশবনীতে বার আর বারবিকিউ-তে
প্রমোদ উদ্যান সাজাব।
কবি ও কবিতার কবেই মৃত্যু হয়েছে
যেদিন থেকে পৃথিবীর ছিদ্র গলে গলে
কেবল তরল অন্ধকার চুঁইয়ে পড়ছিল।
এক আসমানে চাঁদ ওঠে। এক আসমানে কৃষ্ণপক্ষ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন