রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

 হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা 




বর্ণপরিচয়
-----------

আকাশ ঘরে মেঘ এসে ঢুকলে আমাদের  উঠোন জুড়ে গাছের ছায়া এসে পড়ত। গামছা পরে বাবা গরুর মুখে ঘাস এনে দিত। ছোট ছোট পায়ে মাটির দুয়ারে দৌড়াদৌড়ি করলে বাবা নদীর ধারে নিয়ে যেত। দুজনে পাশাপাশি শুয়ে থাকতাম অনেকক্ষণ। নদীর ছলাৎছলে জেগে উঠলে বাবা বলতো, এটা অ। সন্ধেবেলা অ নিয়ে বাড়ি ফিরলে মা মুখে জন্মদিনের মিষ্টি দিত। 

ভাতের থালায় আওয়াজ উঠলে দুপুরের রোদ সোজা মাটির জানলা দিয়ে এসে মায়ের আঁচলে আলো ছায়ার খেলা শুরু করতো। আমরা ভাত মুখে দিয়ে হাসতাম। হাসির আওয়াজে ডুবে যেত ভাতের গন্ধ। মা রান্নাঘরের দেওয়ালে হেলান দিয়ে কাঠের উনুনের গল্প বুনতো। ভাতের থালায় হাতের ছন্দে দুলতে দুলতে বাবা বলতো, এটা আ। অন্ধকারে মায়ের বুকের কাছে আ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম।

খুব ভোরে বাবার হাত ধরে শিশিরে পা ডুবিয়ে হাঁটতে হাঁটতে জমির আলে এসে বসতাম। ধান গাছের গায়ে হাত বোলানো শেষ হলে সূর্য উঠতো। বাবা চোখ বুজে বলতো, এটা ই। নতুন রোদে সোজা দাঁড়িয়ে আমি ই পড়তাম।

অনেক রাতে বৃষ্টি থামলে চাঁদ উঠতো। সেতুর ওপর বসে বাবা গান ধরতো, "আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে"। গান থামলে জ্যোৎস্নায় ভেজা গা থেকে উঠতো অক্ষরের গন্ধ। বুঝতে পারতাম এটাই ঈ। কাছের মানুষ পাওয়ার আনন্দে আমি ভুলে যেতাম রাতে আমাদের কোনো ভাত ছিল না।




1 টি মন্তব্য:

বাঙালির পুরনো কাসুন্দি ।। বারাকপুর স্টেশন পত্রিকা

  বাঙালির পুরনো কাসুন্দি      — উষ্ণিক ভট্টাচার্য  কাসুন্দি বাঙালির এক চিরকালীন ঐতিহ্য। রান্না ও স্বাদের জগতে বাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজ...